আমার মা ছিলো খুব বোকা প্রকৃতির
==========================
মহিলা।
=====
মাথায় বুদ্ধি জ্ঞান খুব একটা ছিলো বলে মনে হয় না। আমি যখন ঢাকা থেকে রাতে লঞ্চে করে বাড়ি ফিরতাম, মা প্রতি ঘন্টায় দু বার করে ফোন করতো। তার ফোনের অত্যাচারে রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারতাম না।
"মা বোঝার চেষ্টা করতো না, আমি এখন বড় হয়েছি। ভার্সিটিতে পড়ি। লঞ্চ থেকে নেমে যখন বাসার সামনে আসতাম তখন দেখতাম বাসার সামনে ভোর রাতে শীতের ভিতর চাদর গায়ে দাড়িয়ে আছে। মাকে কড়া গলায় বলতাম, তোমার কি কখন আক্কেল হবে না?
এই শীতের ভিতর এভাবে দাড়িয়ে থাকার মানে হয়? মা হাসতেন। খুব বকতাম বলে অনেক সময় মা বাসার সামনে দাড়াত না। বাসার নিচের কলিংবেল বাজালে মা দৌড়ে তিন তালা থেকে নেমে এসে গেট খুলে দিতো। তখন চিৎকার করে বলতাম তোমার বুদ্ধি এতো কম কেন?
জানালা দিয়ে চাবি ছুড়ে দিলেইতো তোমাকে নামতে হতো না। মা প্রতিবারই বলতো, চাবি যদি হারিয়ে যায়। একই কথা প্রতিবার শুনতে খুব রাগ লাগত। মায়ের দিকে তাকালে বোঝা যেতো রাতে ঘুমায়নি।
মায়ের কাছে জানতে চাইতাম রাতে কি ঘুমাওনি? মা বলতো, শরীরটা তেমন ভালো না, তাই ঘুম আসেনি। আমি বাড়িতে এসে দু তিন দিনের বেশি থাকতাম না। আর এই কনদিনে, মা আমার সব প্রিয় খাবার গুলো রান্না করতেন।
আমার মনে হয়, পৃথিবীতে যদি মায়েদের রান্নার প্রতিযোগীতা হতো তাহলে আমার মা প্রথম হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক, মাকে দেখতাম, পিঠা বানাতে চাল ভিজাতো, নিজের হাতেই পাটায় পিশে চাল গুড়া করতো। এটা কেমন কথা বলুন তো?
এই আধুনিক যুগে কেউ কি পাটায় পিশে চাল গুড়া করে? পাশেই রাইচ মিল, ১০টাকা দিলেই চাল গুড়া করে দিতো। তখন বুঝতাম না, পাটায় পেশা চালের গুড়ার পিঠার স্বাদই আলাদা।
এসব কাজের জন্য মাকে খুব বকতাম। বলতাম, কবে যে তোমার মাথায় একটু বুদ্ধি হবে? আমার বয়স এখন ৬০ এর মত। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে, এখন সে ভার্সিটিতে পড়ে। ওর নাম মাহিন।
এক মাস পর পর বাড়িতে আসে। যখন শুনি মাহিন বাড়িতে আসার জন্য রাতে লঞ্চে উঠেছে সে রাতে আমি আর মাহিনের মা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিতাম।
মাঝে মাঝে মাহিনের মাকে বলি, মাহিনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করো তো রাতে খেয়েছে কিনা? ফোনে চার্জ আছে কিনা? অপরিচিত কারো কিছু খেয়েছে কিনা? দাত ব্রাস করেছে কিনা? মাহিন খুব বিরক্ত হয়। সে বলে আমি বড় হয়েছি মা।
কিন্তু কি করব ফোন না দিলে তো অস্থির লাগে। দম বন্ধ বন্ধ লাগে। ভোর রাতে মাহিনের মাও রাস্তায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। কি নির্বোধ মহিলা। মাহিন আসলে আমার ঈদ মনে হয়, মজার মজার রান্না হয়, পিঠা হয়, আরো কতো কি। মাহিনের মাও পিঠা বানাতে চালের গুড়া পাটায় পেশে। ওর মাকে দেখলে মনে হয় সব মায়েরাই বুঝি বোকা।
আমি মাঝে মাঝে মাহিনের মাকে বলি, মাহিন এখন অনেক বড় হয়েছে। ওর মা বলে, তোমার মনে আছে কদিন আগেই তো মহিনকে তুমি সারারাত কোলে নিয়ে হাটতে। বদজাত ছেলেটা রাতে ঘুমাতো না। খালি ওয়া ওয়া করে কাদতো।
আমি বলি মাহিনের মা, সেটা কদিন আগের ঘটনা না, সে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। ওর মা বলে, এরই ভিতর ২৫ বছর হয়ে গেলো, টেরই পেলাম না। কাল ছেলেটা ঢাকা চলে যাবে। আবার দু মাস অপেক্ষা করতে হবে।
এ দু মাস যেনো সহজে পার হতে চায় না। সন্তানের জন্য অপেক্ষা করার সময় যেনো খুব লম্বা হয়।
লেখক- জোবায়ের রহমান থেকে সংগৃহীত।
==========================
মহিলা।
=====
মাথায় বুদ্ধি জ্ঞান খুব একটা ছিলো বলে মনে হয় না। আমি যখন ঢাকা থেকে রাতে লঞ্চে করে বাড়ি ফিরতাম, মা প্রতি ঘন্টায় দু বার করে ফোন করতো। তার ফোনের অত্যাচারে রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারতাম না।
"মা বোঝার চেষ্টা করতো না, আমি এখন বড় হয়েছি। ভার্সিটিতে পড়ি। লঞ্চ থেকে নেমে যখন বাসার সামনে আসতাম তখন দেখতাম বাসার সামনে ভোর রাতে শীতের ভিতর চাদর গায়ে দাড়িয়ে আছে। মাকে কড়া গলায় বলতাম, তোমার কি কখন আক্কেল হবে না?
এই শীতের ভিতর এভাবে দাড়িয়ে থাকার মানে হয়? মা হাসতেন। খুব বকতাম বলে অনেক সময় মা বাসার সামনে দাড়াত না। বাসার নিচের কলিংবেল বাজালে মা দৌড়ে তিন তালা থেকে নেমে এসে গেট খুলে দিতো। তখন চিৎকার করে বলতাম তোমার বুদ্ধি এতো কম কেন?
জানালা দিয়ে চাবি ছুড়ে দিলেইতো তোমাকে নামতে হতো না। মা প্রতিবারই বলতো, চাবি যদি হারিয়ে যায়। একই কথা প্রতিবার শুনতে খুব রাগ লাগত। মায়ের দিকে তাকালে বোঝা যেতো রাতে ঘুমায়নি।
মায়ের কাছে জানতে চাইতাম রাতে কি ঘুমাওনি? মা বলতো, শরীরটা তেমন ভালো না, তাই ঘুম আসেনি। আমি বাড়িতে এসে দু তিন দিনের বেশি থাকতাম না। আর এই কনদিনে, মা আমার সব প্রিয় খাবার গুলো রান্না করতেন।
আমার মনে হয়, পৃথিবীতে যদি মায়েদের রান্নার প্রতিযোগীতা হতো তাহলে আমার মা প্রথম হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক, মাকে দেখতাম, পিঠা বানাতে চাল ভিজাতো, নিজের হাতেই পাটায় পিশে চাল গুড়া করতো। এটা কেমন কথা বলুন তো?
এই আধুনিক যুগে কেউ কি পাটায় পিশে চাল গুড়া করে? পাশেই রাইচ মিল, ১০টাকা দিলেই চাল গুড়া করে দিতো। তখন বুঝতাম না, পাটায় পেশা চালের গুড়ার পিঠার স্বাদই আলাদা।
এসব কাজের জন্য মাকে খুব বকতাম। বলতাম, কবে যে তোমার মাথায় একটু বুদ্ধি হবে? আমার বয়স এখন ৬০ এর মত। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে, এখন সে ভার্সিটিতে পড়ে। ওর নাম মাহিন।
এক মাস পর পর বাড়িতে আসে। যখন শুনি মাহিন বাড়িতে আসার জন্য রাতে লঞ্চে উঠেছে সে রাতে আমি আর মাহিনের মা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিতাম।
মাঝে মাঝে মাহিনের মাকে বলি, মাহিনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করো তো রাতে খেয়েছে কিনা? ফোনে চার্জ আছে কিনা? অপরিচিত কারো কিছু খেয়েছে কিনা? দাত ব্রাস করেছে কিনা? মাহিন খুব বিরক্ত হয়। সে বলে আমি বড় হয়েছি মা।
কিন্তু কি করব ফোন না দিলে তো অস্থির লাগে। দম বন্ধ বন্ধ লাগে। ভোর রাতে মাহিনের মাও রাস্তায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। কি নির্বোধ মহিলা। মাহিন আসলে আমার ঈদ মনে হয়, মজার মজার রান্না হয়, পিঠা হয়, আরো কতো কি। মাহিনের মাও পিঠা বানাতে চালের গুড়া পাটায় পেশে। ওর মাকে দেখলে মনে হয় সব মায়েরাই বুঝি বোকা।
আমি মাঝে মাঝে মাহিনের মাকে বলি, মাহিন এখন অনেক বড় হয়েছে। ওর মা বলে, তোমার মনে আছে কদিন আগেই তো মহিনকে তুমি সারারাত কোলে নিয়ে হাটতে। বদজাত ছেলেটা রাতে ঘুমাতো না। খালি ওয়া ওয়া করে কাদতো।
আমি বলি মাহিনের মা, সেটা কদিন আগের ঘটনা না, সে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। ওর মা বলে, এরই ভিতর ২৫ বছর হয়ে গেলো, টেরই পেলাম না। কাল ছেলেটা ঢাকা চলে যাবে। আবার দু মাস অপেক্ষা করতে হবে।
এ দু মাস যেনো সহজে পার হতে চায় না। সন্তানের জন্য অপেক্ষা করার সময় যেনো খুব লম্বা হয়।
লেখক- জোবায়ের রহমান থেকে সংগৃহীত।
0 Comments