একটা ছোট্ট গল্প । কলেজ জীবনের

হাত ধরার বাহানা

লেখক : দুষ্টু পাঠিকার মিষ্টি লেখক

ক্লাস করে বের হবো মাত্র এমন সময়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো । সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশ প্রচণ্ড কালো ।

মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে । আবার থেমে যাচ্ছে ।এমন দিনে সকাল আটটা বাজে সজীব স্যার এর ক্লাস । সামান্য দেরী হলেই পারসেন্টিস দেয় না । তাই তাড়াহুড়ো করে ছাতিটা আনতেই ভুলে গেছি ।

আমরা যারা ছাতি আনিনি তাদের
মধ্যে দু গ্রুপ তৈরি হলো ।

দাঁড়িয়ে থাকা গ্রুপ আর স্বেচ্ছায় বৃষ্টির হাতে আত্মসমর্পণ গ্রুপ । পরের গ্রুপটিতে দু তিনজন ছাড়া আর কেউ আগ্রহ দেখালোনা ।

অনেকে মাথার উপরে ব্যাগ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে । আমি ধীরে ধীরে বৃষ্টির মধ্যেই হাটা শুরু করলাম । সরাসরি হলে যাবো নাকি ক্যাফেটেরিয়ায় যাব ভাবছি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম ক্যাফেটেরিয়া থেকে এক কাপ গরম কফি খেয়ে যাবো ।

ক্যাফেটেরিয়ায় তেমন মানুষ জন নেই । পিছনের

দিকে এক জোড়া কাপল

ল্যাপটপে সম্ভবত কিছু দেখছে । আর

একজন জানালার

পাশে বসে

বৃষ্টি দেখছে শিঙাড়ার শেষ অংশটুকু

হাতে ধরে । আমি কফির অর্ডার

দিয়ে বসে আছি । পকেট

থেকে মোবাইলটা বের

করে ফেইসবুকে লগইন করলাম ।

না কেউ ম্যাসেজ দেয় নি । দুই

একটা নোটিফিকেশন চেক করলাম ।

হোম পেইজে নতুন একটা ভালোবাসার

গল্প দেখলাম । হায়রে ভালোবাসা !

মাঝে মাঝে একটা হাতের

এতো প্রয়োজন অনুভব করি কিন্তু সেই

হাত বাড়ানোর কোনো মানুষ নেই । এই

ব্যাপারে সম্পূর্ণ ফ্রাস্ট্রেটেড

হয়ে গেছি ।

কফি খাচ্ছি আর

গল্প পড়ছি তাই আশেপাশের পরিবেশ

থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম । হঠাৎ

পানির ছিটায় আবার বাস্তব

জগতে ফিরে আসলাম । আমার খুব

কাছে দাঁড়িয়েই দুইটা ছেলে আর

তিনটা মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো । কোন

কারনে

একটা মেয়ে একটা ছেলেকে গ্লাস

থেকে পানি ছিটিয়ে মারতে গিয়ে

আমার গায়ে মিস টার্গেট করলো ।

কখন আসলো এরা ? আমার

গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়ার পর

পুরো গ্রুপটা চুপ হয়ে গেলো ।

যে মেয়েটি পানি ছিটিয়েছিল ,বসে

ছিলাম বলে তাকে এতক্ষন ঠিক

মতো দেখতে পারছিলাম না ।

মেয়েটি আমার সামনে এসেই খুব অনুনয়

করে সরি জানালো ।

মেয়েটাকে দেখে আমি অনুভূতি শুন্য

হয়ে গেলাম ।

মানুষ এতো

কিউট হয় কিভাবে !লাল ফ্রেমের

চশমা পরা ।কার্ভ চুল । ফ্যানের

বাতাসে চুল

গুলো এলোমেলো হয়ে বারবার ওর মুখের

উপর আছড়ে পড়ছে । মেয়েটি আমার

কাছে শুনতে চাচ্ছে

" ওকে । ঠিক আছে ।সমস্যা নেই " এমন

কিছু । কিন্তু আমি কিছুই

না বলে হা হয়ে তাকিয়ে আছি ।

কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর যখন

ওরা বুঝলো যে আমি কিছুই বলবনা তখন

ওরা নিজেরাই লজ্জায় ক্যাফেটেরিয়া

থেকে বের হয়ে

গেলো । আমি কি খুব অদ্ভুত একটা কাজ

করে ফেললাম । মিনিমাম " ইটস

ওকে " টাইপ একটা ছোট রিস্পন্স

দিলে কি হতো !

আমি একা একা হাঁটতে অনেক পছন্দ

করি । আগে কোন উদ্দেশ্য থাকতো না ।

এখন

সেই কার্ভ চুল ,লাল ফ্রেমের

চশমা পরা মেয়েটিকে দেখার জন্য

হাঁটি । ভার্সিটি ডে তে হল

থেকে গেঞ্জি দিলো । সব হল

থেকে র্যালী বের হলো । মেয়েদের

হল থেকে যখন র্যালী এসে আমাদের

সাথে যোগ

দিলো তখন

ছেলেদের উল্লাস ধ্বনি আরও

বেড়ে গেলো । আমি খুঁজছি সেই লাল

ফ্রেমের চশমা পরা কার্ভ চুল

ওয়ালী মেয়েটিকে । কিছুক্ষন খোঁজার

পর না দেখে হতাশ হয়ে পড়লাম ।

বিকেলে কনসার্টে গেলাম

অডিটরিয়ামে ।

হঠাৎ অন্য পাশের

দরজা দিয়ে একসাথে চার

পাঁচটা মেয়ে ঢুকল । ঐ পাঁচ জনের

মধ্যে ঐ মেয়েটিও ছিল ।

। মেয়েটি আকাশী নীল

একটা শাড়ি পড়েছে । আজ আরও

বেশি সুন্দর লাগছে । পুরো কনসার্ট

জুড়ে

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়েই রইলাম

। মেয়েটির একবার আনমনে এপাশ

ওপাশ তাকাতে গিয়ে আমার

সাথে চোখে চোখ পড়লো । এরপর

থেকে মেয়েটিও

মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছে যে আমি

ওকে দেখছি কিনা ।

রাত আটটা বাজলে মেয়েদের হল বন্ধ

হয়ে যায় । তাই মেয়েরা আটটার

দিকে বের হয়ে গেলো কনসার্ট

থেকে । মেয়েটি অডিটরিয়াম

থেকে বের হবার সময় আমার

দিকে একবার আড় চোখে তাকালো ।

কোনো অদৃশ্য টানের বলে আমিও

সাথে সাথে সীট থেকে উঠে ওর পিছু

নেয়া শুরু করলাম । কিছুদিন যাবৎ এক

টানা বৃষ্টি হচ্ছে । আজ সারাদিন

বৃষ্টি হয়নি তবে এখন

অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে ।

মেয়েটির হাতে কোন ছাতা নেই ।

সবচেয়ে অবাক হবার

ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটার সাথে কোন

বান্ধবী নেই । এখন অডিটোরিয়াম এর

সামনে কোন রিকশাও নেই । আমি এই

সুযোগ হাতছাড়া করতে পারলাম না ।

দ্রুত

মেয়েটির সামনে গেলাম

-ক্যামন আছো ?

আমাকে চিনতে পারছো ?

-হম চিনছি ! আপনি সেই হা বাবা !

আজ সারাক্ষন ও হা করে ছিলেন আমার

দিকে তাকিয়ে

আমি না শোনার ভান করলাম

-তোমার বান্ধবীরা কোথায় ?

-ওরা তো আসেনি

-দেখলাম যে একসাথে ঢুকলে চার পাঁচ

জন ?

-আমি ওদের সাথে আসিনি ।

-তুমি কোন ইয়ার ?

-ফার্স্ট ইয়ার ।আপনি?

-ফোর্থ ইয়ার

-অনেক বড় ভাই !

-হুম ! তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট ?

-আই পি ই । আপনি ?

-আমি ট্রিপল ই

-ভাইয়া ! একটা রিকশা ঠিক

করে দিতে পারবেন ?

আমার হল বন্ধ হয়ে যাবে এখনি

-ওকে দাঁড়াও

বৃষ্টির

মাঝে আমি রিক্সা খুঁজতে নামলাম ।

জীবনে রিক্সা খোঁজার

মাঝে এতো আনন্দ কোনদিন পাই নি ।

মেয়েটি রিক্সায় চলে যাবার সময়

আমাকে থ্যাঙ্কস জানালো ।

আমি রিপ্লাই দিতে ভুলে গেলাম ।

সত্যিকারের হা বাবার মতো আবার

তাকিয়ে রইলাম । আকাশী নীল

শাড়ী ,নীল টিপ ,লাল ফ্রেমের চশমা ,

কার্ভ চুল সব কিছু

আমার মাথা একেবারে গোব্লেট

করে দিচ্ছিলো ।

মেয়েটি চলে যাবার পর

আমি জিভে কামড় দিলাম । কারন

মেয়েটার নামটাই জানা হয়নি ।

এরপর নিয়মিত ওদের ডিপার্টমেন্ট এর

সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করতে

লাগলাম । কোন লাল ফ্রেমের

চশমা পরা মেয়ে দেখলেই

তাকিয়ে থাকি ।

মেয়েটিকে একদিন ডিপার্টমেন্টাল

স্টোরে দেখলাম ।

আমি সাথে সাথে কোন কিছু কেনার

ভাব করে ঢুকলাম ।

-মামা ! এক হাজার টাকার

ভাঙতি হবে ?

-না মামা !

দেখি ও একা দাঁড়িয়ে কিছু চানাচুর ,

বিস্কুট ,চিপস কিনছে । এখন

যদি কথা না বলতে পারি তবে কিছুই

হবে না । ও আমাকে খেয়ালই

করলো না ।

ও টাকা দিয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর

থেকে বের হয়ে গেলো ।

সাথে সাথে আমিও বের হলাম ।

আমাদের ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্ট

ভবনের সামনে চলে আসতেই ওর

পাশে গিয়ে বললাম ,

-তোমার নামটাই তো জানা হল না

ও কিছুটা চমকে গেলো ।পরক্ষনেই

নিজেকে সামলে বলল ,

-  লিসা

-খুব সুন্দর নাম তো

ও হাসি দিয়ে বলল , হুম !

-তোমার ফেইসবুক আইডি আছে ?

-নাহ

-ওহ ! এই যুগের একটা মেয়ের ফেইসবুক

আইডি নেই ? খুব অবাক হলাম !

-ভাইয়া ! এসব আমার ভালো লাগে না

-হুম ! ফেইসবুক আসলেই ভালো না ।

আমিও ছাড়তে চাচ্ছি ।

একবারে চীরদিনের জন্য ছাড়বো ।

কিন্তু আমার একজন ভালো বন্ধু দরকার

। মনে করো বাস্তব জগতের বন্ধু ।

তুমি কি আমার বন্ধু হবে ?

-আমার লাভ কি ?

-বন্ধুত্তের মোড়কে বিশ্বাস উপহার

দেবো তোমাকে । আর বিশ্বাস অনেক

গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ।

প্রতিটা মানুষের একজন

বিশ্বাসী বন্ধুর প্রয়োজন হয় ।

আমি সেই মানুষটি হতে চাই

-আপনাকে বিশ্বাস করবো কি করে ?

-নিজেকে বিশ্বাস করো ?

-সব সময় না ।

-তাহলে কি করে বুঝাবো ?

-আপনি যদি অন্য ছেলেদের

চেয়ে ভিন্য না হন

তাহলে ওদেরকে বিশ্বাস

না করে আপনাকে বিশ্বাস

করবো ক্যান ?

এমন কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম ।

আসলেই

কিভাবে বুঝাবো ওকে আমি অন্যদের

থেকে ভিন্য । যে কখনো বিশ্বাস

ভাঙবেনা । যে বুকের তাজা রক্ত

ঢেলে বিশ্বাস এর জন্য পথ

তৈরি করবে । এমন কি করা যায় হঠাৎ

যাতে সে বিশ্বাস

করে আমি সবচেয়ে বিশ্বাসী ।

আমি সবচেয়ে ভিন্য ।

আমি সবচেয়ে যোগ্য তার জন্য ।

-তুমি বলো আমি কি করবো ?

-আমি কেন বলবো ? আপনি এমন কিছু

বলেন যাতে আমি আপনাকে বিশ্বাস

করতে পারি ।তবে প্লীজ ! আমি কোন

ভায়োলেন্স চাই না । সিনেমার

মতো হাত কেটে আমাকে লাভ লেটার

দেয়া কিম্বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে

ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে যাবেন

না ।আমি এসব প্রচণ্ড অপছন্দ করি ।

-আগে বন্ধু হবার তো সুযোগ দাও ।

তাহলেই বুঝবে আমি ক্যামন !

-আপনাকে আমি বন্ধু করলে তো হলই ।

কিন্তু আপনাকে আমি কেন বন্ধু

করবো সেটা আমাকে বলবেন না ?

-কারন তোমাকে প্রথম দেখার পর

থেকেই সব সময় এখন

তোমাকে নিয়ে চিন্তা করি

-আমি যদি বলি অন্য কেউ ও

আমাকে নিয়ে চিন্তা করে ? এখন সেই

অন্য কেউ কে বাদ দিয়ে ক্যান

আপনাকে বন্ধু বানাবো ?

মেয়ের তো দেখি কার্ভ চুলের

মতো মাথায় ভীষণ প্যাঁচ ।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না ।

সত্যিই নিজেকে খুব অসহায়

মনে হচ্ছিলো । আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়েই

রইলাম । মনে হচ্ছে খুব বড় অপরাধ

করে ওর সামনে

অপরাধ স্বীকার করছি । আমি বললাম ,

আমি কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি ।

আমাকে ভাবতে হবে । মেয়েটি ঠোটের

কোনে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল ,

আপনি ভাবতে থাকেন । আর যেদিন

প্রমান করতে পারবেন

আপনি সবার থেকে ভিন্য , সবার

থেকে বিশ্বাসী । সেদিন আমরা বন্ধু

হবো । ক্যামন ? ভালো থাকবেন ।

আমাকে যেতে হবে ।
এই

কথা গুলো বলে মেয়েটি চলে গেলো ।

আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম ।

আমি রুমে এসে বিশাল টেনশনে পড়লাম

। কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা ।

ছোট ক্যাম্পাস । এক মেয়ের

পিছনে কয়েকদিন ঘুরলেই

জানাজানি হতে টাইম লাগবেনা ।

প্রেসটিজ পুরা পান্তা ভাত

হয়ে যাবে ।

পরের দিন ক্লাস করে আনমনেই ওদের

ডিপার্টমেন্ট এর

সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । ওর ক্লাস

কখন শেষ হবে অথবা শেষ

হয়ে গেছে কিছুই জানিনা । ক্লাস

টাইমে ওদের ডিপার্টমেন্ট এর

সামনে আর বিকেলে ওদের হল

থেকে একটু দূরে পদ্ম পুকুরের

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বদ

অভ্যাসে পরিনত হল ।

তবে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে

কিছুদিন এর মধ্যে ওর ক্লাস এর সময়

সূচীর একটা আনুমানিক ধারনা পেলাম

। রবিবার ল্যাব আছে বিকেলে ।

সোমবার আর মঙ্গলবার সকাল

দশটা ত্রিশ এ ক্লাস শেষ হয় ......।

শুধু ক্লাস না ও বিকেলে কবে কখন

হাঁটতে কিম্বা ঘুরতে বের হয় তার ও

একটা আনুমানিক ধারণা পেলাম । দুই

সপ্তাহে অন্তত একবার

খুলনা ঘুরতে যায় বান্ধবীদের নিয়ে ।

তবে অবশ্যই বৃহস্পতি বার । পছন্দের

রেস্তোরাঁ কাউন্ট্রি লাউঞ্জ ।

ক্যাম্পাসে ঘুরলে সন্ধ্যার পর বের হয়

। চালাক মেয়ে ।

সাথে

দুজন বডী গার্ড বান্ধবী থাকে । আর

কিছু কষ্টকর তথ্য পেলাম ।

ডিপার্টমেন্ট এর অনেক ছেলেই ওর

উপর ক্রাশ । স্বস্তির ব্যাপার

হচ্ছে কারো প্রতি ওর কোনো আগ্রহ

নেই ।

আজ আমাদের মাত্র একটি ক্লাস হল ।

আমি ক্লাস শেষে ওদের ডিপার্টমেন্ট

এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আকাশ

টা আজও খুব কালো । যেকোনো সময়

বৃষ্টি নামতে পারে । মাঝে মাঝেই

অনেক দূরে বিজলী চমকাচ্ছে ।

ও যখন ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্ট

ভবন থেকে বের হল তখন বৃষ্টির

মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে । ও

আমাকে দেখে নিচে তাকিয়ে হালকা

একটা হাসি দিয়ে ওদের হলের

দিকে হাটা শুরু করলো । আমিও

একটা নির্দিষ্ট

দূরত্ব বজায় রেখে ওর পিছে আপন

মনে হাঁটতে লাগলাম । ওর হাতে খুব

সুন্দর একটা রঙিন ছাতা ।

মাঝে মাঝে ছাতাটা একটু নিচু

করে পিছনে ফিরে আমাকে দেখছে ।

বৃষ্টির পানিতে আমার শার্ট প্যান্ট

ভিজে একাকার

অবস্থা । আমার চুল থেকে পানি আমার

গাল বেয়ে বেয়ে নিচে পড়ছে ।

মাঝে মাঝে পানির প্রবল গতিবেগ এর

কারনে সামনের

দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে । ওর হলের

কিছু দূরে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম । ও

হলের গেট দিয়ে ঢোকার

সময় ও একবার আমাকে দেখে নিলো ।

আজ ও অনেক বার তাকিয়েছে ।

এটা কি প্রশ্রয় ?

নাকি পরে তোকে দেখে নেবো টাইপ

লুক ছিল ?

মেয়েটি আজ বাসে তিন নম্বর

সারিতে বসা । বাসে প্রচণ্ড ভীর ।

শ্বাস করার ও জায়গা নেই ।

আর আমি পিছনের গেটে বাঁদরের ন্যায়

ঝুলে আছি । বাস এর গেটে ঝোলার

অভ্যাসটা ঢাকা কলেজ থেকে পাওয়া ।

বাস চলছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে বাতাস

খাচ্ছি ।

মেয়েটি খুলনা নিউমার্কেটে নামলো ।

সাথে দুজন বান্ধবী ।

( আর

ঐ ছেলে দুটি । আমি ও নেমে গেলাম ।

ওরা একটা ফাস্ট ফুড এর

দোকানে ঢুকে গেলো ।

আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম একটু

দূরে । হঠাৎ বিদ্যুতের বেগে ফাস্ট

ফুডের দোকান

থেকে মেয়েটি বেরিয়ে এলো ।

পিছনে আরেকটি

মেয়ে ওকে ডাকছে , লিসা ! এই

লিসা ! আমি বোঝার চেষ্টা করলাম

কি হয়েছে । এখন ওরা সবাই বের

হয়ে এসেছে ।আমি ওদের খুব কাছেই

হাঁটতে লাগলাম ।একটা মেয়ে ওদের

মধ্যে একটা ছেলেকে বলছে ,

এতো দ্রুত

প্রপস করতে গেলি ক্যান গাধা ? এই

কথা শুনেই আমার বুকে প্রচণ্ড আঘাত

লাগলো । আমি আর ওদের পিছু

নেয়া ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম ।

এতো খারাপ লাগছে আমার

কি করবো বুঝতে

পারছিনা । আমি হাইওয়ে রোড ধরে

একা একা হাঁটতে লাগলাম ।

খুলনার রাস্তা গুলো এম্নিতেই

ফাকা ফাকা ।আজ যেন আমার কষ্টের

মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে একদম

যানবাহন শুন্য অবস্থা ।

আমি একটা ছোট রাস্তার

মধ্যে সামান্য ভীর দেখে ঢুকলাম ।

দেখলাম

একজন অন্ধ লোক গলা ছেড়ে লালন

গীতি গাইছে

" মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের

মানুষের ও সনে ? "

এতো সুন্দর কণ্ঠ

আমি কখনো টিভি কিম্বা রেডিওতে

শুনিনি । একেই বলে প্রকৃতি প্রদত্ত

কণ্ঠ । সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ওনার

কাছে গান শিখতে পারতাম ! আর

এভাবে রাস্তায়

গলা ছেড়ে গাইতে পারতাম ! গান

শুনছি

আর আমার মাথায় অনেক ভার অনুভব

করছি ।শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আর খুব

শীত শীত লাগছে । এখানেই

ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে ।

কিভাবে অতদুর যাবো ? প্রচণ্ড জ্বরের

ঘোরে তবুও কিভাবে কিভাবে

যেন অটো রিক্সায় চলে আসলাম

ক্যাম্পাসে । রাতে ধুম জ্বর উঠলো ।

তবুও মাথার মধ্যে সেই লোকটার গান "

মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের

মানুষের ও সনে ? " বাজছে ।

আমি হারিয়ে গেলাম গভীর অচেতনে ।

রাতে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন

দেখলাম । দেখলাম

জিনিয়াকে নিয়ে আমি নদীর

পাশে হাঁটছি । পাশে বড় বড়

সাদা কাশ ফুলের বাগান ।একটু পর পর

সেই কাশফুল গুলো বাতাসের

তালে তালে মাথা নুয়ে আমাদের

অভিবাদন জানাচ্ছে । জিনিয়া

একটু পর পর রাগ করে আমার

থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ।আমি ওর

পিছে হাঁটছি ওকে ধরার জন্য ।

মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি ক্যাম্পাসে

হাঁটছি ওর পিছু পিছু । কিন্তু সেই

গানটি এখনো শুনছি

আমি । মনে হচ্ছে বহুদূর

থেকে ভেসে আসছে ।

একসপ্তাহ জ্বরের ঘোরে একদম বেহুশ

ছিলাম । দুইটা ক্লাস টেস্ট ,

তিনটা প্র্যাকটিকাল ক্লাস মিস

করেছি । এতো দুর্বল ছিলাম

যে বন্ধুরা রিক্সায় করে

( আমার হল থেকে মাত্র দুই মিনিটের

রাস্তা ) মেডিকেল

সেন্টারে নিয়ে ডাক্তার

দেখিয়ে আনলো । ডাক্তার

বলেছে ভাইরাস জ্বর । বুঝলাম না !

লিসাকে ঐ ছেলের প্রপস করার

সাথে আমার ভাইরাস জ্বরের

কি সম্পর্ক ।

এক সপ্তাহ পর জ্বর কমে গেলো ।কিন্তু

শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ।

লিসাকে দেখা হয়নি কতদিন ! ওহ !

আমি আজ শেষ বার এর

মতো দাঁড়িয়ে আছি ।

আমি লিসাকে বলবো ,"

আমি আসলে নিজেকে তোমার

বিশ্বাসী প্রমান

করতে ব্যর্থ হয়েছি । এতদিন

যা করেছি তার জন্য

আমাকে ক্ষমা করে দিও " ।আজ

এতো রোদ ! মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম

ব্যথা শুরু হয়েছে । মাথার দু

সাইডে টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি ।

আমার কি আবার জ্বর

উঠবে নাকি ?

লিসা ওদের ভবন থেকে বের

হয়ে আসার পর আমি ওর পিছু নিলাম ।

লিসা অবশ্য আমাকে দেখেনি ।

কিন্তু হাঁটার সময় অনুভব করলাম আমার

প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে ।পা আর

আগাচ্ছেনা ।আমি মাতালের

মতো এলোমেলো

পা ফেলছি । উফফ ! সব কিছু আঁধার

হয়ে আসছে ক্যান ? লিসাকে এখনই

ডাকতে হবে ।ঐ তো সামান্য

সামনে আছে ।

আমি সর্বশক্তি দিয়ে লিসা বলে

চিৎকার করে ডাকলাম ।

মেয়েটা শুনতে পেলো কিনা জানিনা

এরপর আমার আর কিছু মনে নেই ।

চোখ মেলে দেখি আমি মেডিকেল

সেন্টারে শুয়ে আছি । আমার

হাতে স্যালাইন লাগানো । আমার

আশে পাশে যে অনেক উৎসুক জনতার

ভীর সেটা আমি না দেখেই

বুঝতে পারছি । ডাক্তার জিজ্ঞেস

করলেন

" এখন ক্যামন লাগছে ? "

-এইতো ভালো !

-রোদের মধ্যে সম্পূর্ণ হাটা নিষেধ ।

ছাতা নিয়ে হাঁটবে । মনে থাকবে ?

-হুম ।

ডাক্তার এর রুম থেকে বের

হয়ে হয়ে দেখলাম

লিসা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।

-তুমি এখানে ?

-আমাকে ডাক দিয়ে অজ্ঞান

হলে আমি কি করবো ?

লিসার মুখে লাজুক হাসি ।

এই প্রথম ক্যাম্পাসে লিসার

পাশাপাশি হাঁটছি । মাঝে মাঝে ওর

ডান হাতের আঙুল ছুঁতে চাচ্ছি কিন্তু ও

আঙুল সরিয়ে নিচ্ছে আর

মুচকি মুচকি হাসছে । পদ্ম

পাড়ে আসার সাথে সাথে আবার

অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল ।

লিসা ওর বিশাল হ্যান্ড ব্যাগ

থেকে টিপ ছাতাটা বের করে দুজনের

মাথার উপর ধরলো । কিন্তু আমার

মাথার সাথে একটু পর পর

বাড়ি লাগছে ছাতার সাথে ।

" দাও ! আমি ধরি ছাতাটা "

-নাহ আমি ধরবো

-আমি যে বাড়ি খাচ্ছি একটু পর পর ।

-এতো লম্বা ক্যান তুমি ?

-মানুষ লম্বা বি এফ এর জন্য পাগল ।

আর মেয়ে কি বলে এসব ?

-হুম তোমাকে বলসে ?

আচ্ছা দাও দুজন মিলে ধরি ।

আমি ছাতি ধরার ছলে ওর হাত শক্ত

করে ধরলাম । জানিনা ও কি অনুভব

করছে এখন ! শুধু কি আমার হাতের

উষ্মতা নাকি প্রবল বিশ্বাস ?

Post a Comment

0 Comments